সংবাদ শিরোনাম
লোডিং...
Menu

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৭

ট্রাম্প কীভাবে আবার জিতলেন

 

যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র, ৬ নভেম্বর ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র, ৬ নভেম্বর ২০২৪ছবি: রয়টার্স

আট বছর আগে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তখন ট্রাম্পের বিজয়কে ‘সংকীর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করাটা সহজ ছিল। এমনকি সেই বিজয়কে ‘অপ্রত্যাশিত’ সাফল্য হিসেবে অভিহিত করারও সুযোগ ছিল।

কিন্তু এবার আর ট্রাম্পের বিজয়ের ক্ষেত্রে এসব কথা প্রযোজ্য নয়।

২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছ পরাজিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু তিনি নির্বাচনে জালিয়াতির ভুয়া অভিযোগ তোলেন।

ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর উগ্র সমর্থকেরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা হয়। এমনকি একটি ফৌজদারি মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত পর্যন্ত হন।

এত কিছু সত্ত্বেও ট্রাম্প এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্পষ্ট বিজয় অর্জন করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি দোদুল্যমান হিসেবে পরিচিত সাতটির মধ্যে পাঁচটি অঙ্গরাজ্যেই জয়ী হয়েছেন। ফলাফল এখনো ঘোষণা না হওয়া বাকি দুটিতেও তিনি জয়ের পথে।

আরও পড়ুন
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়ার উচ্ছ্বাস। ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র, ৬ নভেম্বর ২০২৪
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়ার উচ্ছ্বাস। ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র, ৬ নভেম্বর ২০২৪
ছবি: রয়টার্স

এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি প্রান্তে তাঁর সমর্থন বাড়িয়েছেন। এমনকি প্রায় প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাঁর সমর্থন এবার বাড়তে দেখা গেছে।

২০২০ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে নির্বাচনী মানচিত্র ‘লাল’ রঙের (রিপাবলিকান) ছেয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়বে।

নিউইয়র্ক টাইমসের অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্প গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, যিনি জাতীয় সাধারণ ভোটেও (পপুলার ভোট) জয়ী হতে যাচ্ছেন।

তবে একই সময়ে এ কথাও বলতে হয়, ট্রাম্পের এই জয়ের মাত্রাকে অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কারণ, এটি কোনো ভূমিধস জয় নয়।

আরও পড়ুন
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে। ৬ নভেম্বর ২০২৪
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে। ৬ নভেম্বর ২০২৪
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় পপুলার ভোটের ক্ষেত্রে কোনো প্রার্থীর এক বা দুই শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে বিজয় অর্জন অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

আবার প্রায় ৩১২টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে কোনো প্রার্থীর জয়ী হওয়াটাও বিরল কিছু নয়।

ট্রাম্পের এবারের জয় ২০১২ সালে ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী বারাক ওবামার ‘পরিমিত’ বিজয়ের মতো অতটা বড় কিছু নয়।

পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ওবামা ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবার জয়ী হন। একইভাবে আরেক ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী বিল ক্লিনটন পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ১৯৯২ সালের নির্বাচনী জয়ী হয়েছিলেন। এই দুই নির্বাচনে জয়ী দুই প্রার্থীর (ওবামা ও ক্লিনটন) চেয়েও ভালো করতে পারেননি ট্রাম্প। বরং এ ক্ষেত্রে তিনি অনেকটা পিছিয়ে আছেন।

আরও পড়ুন
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের মানচিত্র
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের মানচিত্র
ছবি: রয়টার্স

তবে যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য, তা হলো ট্রাম্প কোনো সাধারণ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নন। ফলে তাঁর সাদামাটা জয়ও নিয়ে অনেক চর্চা হচ্ছে।

ট্রাম্প আদালত ঘোষিত রায় অনুযায়ী একজন অপরাধী। তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ফলাফল উল্টে দিতে চেয়েছিলেন। সে জন্য তিনি নানান অপতৎপরতা চালিয়েছিলেন।

এসব দিক বিবেচনায় ট্রাম্পকে সাধারণভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘কার্যকর’ প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল না। তবে বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা গেল, ট্রাম্প কেবল কার্যকর প্রার্থীই ছিলেন না, তিনি সন্তোষজনকভাবে জিতে গেছেন।

ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও বেশির ভাগ ভোটার তাঁকে একজন ‘অপ্রীতিকর’ প্রার্থী হিসেবে দেখছেন।

আরও পড়ুন
ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস
ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস
ছবি: এএফপি

সিএনএনের বুথফেরত জরিপে (এক্সিট পোল) দেখা গেছে, ট্রাম্পের প্রতি অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা ভোটারের হার মাত্র ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রতি প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা ভোটারের হার ৫৪ শতাংশ।

বেশির ভাগ ভোটার (৫৫ শতাংশ) বলেছেন, ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই চরম।

তবে এই ব্যাপারটি স্পষ্ট যে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের বিষয়ে আবেদন থাকার ক্ষেত্রে এমন অনেক দিক আছে, যা জরিপের সহজ প্রশ্নে উঠে আসে না।

কিন্তু ট্রাম্পের এই বিজয় ডেমোক্র্যাটদের অবস্থা সম্পর্কে অনেক বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে পারে। আবার মার্কিন জনসাধারণের মধ্যে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা, সে বিষয় সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারে। সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি ট্রাম্পের ভূমিকা মুখ্য নয়।

সর্বোপরি কাগজে-কলমে ডেমোক্র্যাটরা এই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য উপযুক্ত অবস্থানে ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো প্রেসিডেন্টের জনসমর্থন যখন তলানিতে চলে যায়, তখন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর নির্বাচনে জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার ইতিহাস নেই। আবার অনেক আমেরিকান যখন মনে করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বে দেশ ভুল পথে রয়েছে, তখনো সেই দলের প্রার্থীর জয়ী হওয়ার নজির নেই।

আরও পড়ুন
দক্ষিণ কোরিয়ার পত্রিকায় ট্রাম্পের জয়ের খবর
দক্ষিণ কোরিয়ার পত্রিকায় ট্রাম্পের জয়ের খবর
ছবি: এএফপি

ডেমোক্র্যাটদের ওপর মার্কিন ভোটারেরা যে ত্যক্ত-বিরক্ত-ক্ষুব্ধ, তার লক্ষণ সর্বত্রই ছিল।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রথমে নিজেই আবার নির্বাচনে লড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁকে সরে দাঁড়াতে হয়। বাইডেনের স্থলে প্রার্থী হন তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। ডেমোক্র্যাটরা ভেবেছিলেন, মার্কিন ভোটারেরা ট্রাম্পের ওপর এতটাই বিরক্ত যে তাঁরা ক্ষমতাসীনদের ভুলত্রুটি ছোট করে দেখবেন।

অন্যদিকে, রিপাবলিকান শক্তি জোরদার হওয়ার লক্ষণ সর্বত্রই ছিল। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়ছিল। এমনকি তিনি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত পর্যন্ত হয়ে যান। তবুও জরিপে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ছিল।

ভোট দেওয়ার জন্য রিপাবলিকান নিবন্ধন-সংখ্যা হু হু করে বাড়ছিল। আবার তরুণ, কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যেও ট্রাম্পের সমর্থন বাড়ছিল। অথচ, এই গোষ্ঠীগুলোকে ঐতিহাসিকভাবে তীব্র ট্রাম্প–বিরোধী বলে মনে করা হচ্ছিল।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: